প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ও সিদ্ধার্থ পাকিড়া ( বর্ধমান ) : মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ টাকা দিয়ে হয়না । টাকা দিয়ে প্রশাসন ও পুলিশ প্রতিবাদকারীদের মুখ বন্ধ করতে পারবে না ।ফের যদি বালি খাদান চালু করে বাঁধের রাস্তা দিয়ে বালির লরি নিয়ে যাওয়া হয় তবে আবারও খাদানে আগুন জ্বলবে । রেহাই পাবেন না বালির লরির চালকরাও ।পূ্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ ও প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে শনিবার এই হুঁশিয়ারি দিলেন জামালপুরের মুইদিপুর গ্রামের মহিলারা ।শুধু হুঁশিয়ারি নয় ,বালি খাদান বন্ধ করতে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন মুইদিপুরের বাসিন্দারা । যা নিয়ে তুঙ্গে উঠেছে শাসক ও বিরোধীদের রাজনৈতিক তর্জা । মাইদিপুর গ্রামে গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৯ টা নাগাদ ঘটেযায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা।ওই সময়ে গ্রামের বাঁধের রাস্তার ধারে থাকা মাটির দু ‘কুটুরি বাড়িতে ছিলেন প্রশান্ত বাউরি ও তাঁর ভাই সুশান্ত বাউরির পরিবার সদস্যরা । ওভার লোড বালি বোঝাই লরি বাঁধের রাস্তা থেকে প্রশান্তর ঘরের উপরে উল্টো পড়ে । মাটির বাড়ির দেওয়াল ও লরি থেকে পড়ে যাওয়া বালির নিচে চাপা পড়ে মৃত্যু হয় প্রশান্তর স্ত্রী সন্ধ্যা বাউরি ,নবম শ্রেনীতে পড়ুয়া মেয়ে রিঙ্কু বাউরি ও সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলে রাহুল বাউরির ।ঘটনার সময়ে বাড়িতে না থাকায় প্রানে বেচে যান প্রশান্ত । এই ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছালে পুলিশের উপরে জনরোষ আছড়ে পড়ে।রোষের আগুনে পোড়ে এলাকার বালি খাদানের দুটি অফিস ঘর এবং সেখানে থাকা বালি বোঝাই একটি লরি ও ট্র্যাক্টর । রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ ও জেলা প্রশাসনে কর্তারা শুক্রবার বিকালে ক্ষতিপূরণের সাড়ে ছয় লক্ষ টাকার চেক প্রশান্ত বাউরির হাতে তুলে দেন । প্রশান্ত জানিয়েছে ,“জেলা প্রশাসন ছাড়াও জামালপুর থানার পুলিশের কর্তা তাঁর হাতে আট লক্ষ টাকা দিয়েছে । তবে প্রশান্তর সাফ জবাব অর্থ দিয়ে পরিবারের তিন জনের মৃত্যুর ক্ষতি পূরণ হবার নয় । চোখের জল মুছতে মুছতে প্রশান্ত এদিন বলেন ,টাকা হয়তো কিছু মিলেছে । কিন্তু স্ত্রী ও সন্তানদের আর তিনি ফিরে পাবেন না । আজীবন স্ত্রী ও সন্তানদের শোক নিয়েই তাঁকে দিন কাটাতে হবে । ”
প্রশাসন ও পুলিশ মৃতর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ অর্থ যাই দিক ,বালি খাদান আর চলতে না দেওয়ার ব্যাপারে এককাট্টা হয়েছেন মুইদিপুরের বাসিন্দারা ।এদিন মুইদিপুর গ্রামের বধূ সুজাতা বাউরি ,রেখা বাউরি ,যশদা বাউরি সহ আরো বহু মহিলা দাবি করেন খাদানটি অবৈধ ভাবে চলছিল । পুলিশ ও প্রশাসন সব জানার পরেও এতদিন ব্যবস্থা নেয় নি । এদিন পথে নেমে তারাই প্রতিবাদে মহিলারা সরব হন ।মহিলারা বলেন , ক্ষতিপূরণের নামে মৃতর পরিবারকে টাকা দিয়ে সবার মুখ বন্ধ করা যাবেনা। পুলিশ ও প্রশাসনকে মুইদিপুর গ্রামে চলা বালি খাদান বন্ধ করতেই হবে । পাশাপাশি গ্রামে বাঁধের রাস্তা দিয়ে বালির লরির যাতাযাতও বন্ধ করতে হবে । তা না করে বালি খাদান যদি ফের চালু হয় ও গ্রামের রাস্তা দিয়ে ফের যদি বালির লরি যাতায়াত করে তবে আবার খাদানে আগুন জ্বলবে । বালির লরির চালকদেরও রেয়াত করা হবে না বলে মহিলারা এদিন স্বষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছেন । প্রশান্ত বাউরির দিদি প্রতিমা বাউরি ও গ্রামের মহিলা সুজাতা বাউরি বলেন , “বালি খাদানের অফিস থেকেই বিক্রি হতো মদ সহ অন্য নেশার দ্রব্য । আর নেশা করেই লরির চালকরা ওভার লোড বালির লরি নিয়ে বাঁধের রাস্তা দিয়ে বেপরোয়া গতীতে যাতায়াত করে । বৃহস্পতিবার প্রশান্ত বাউরির বাড়িতে বালির লরি উল্টে পড়েছে । ফের খাদান চালু হলে বাঁধের রাস্তার ধারে বসবাসকারী অন্য কারুর বাড়িতেও বালির লরি উল্টে পড়বে না তার কি গ্যাারান্টি আছে । তাই প্রশাসন যদি বালি খাদিন চালু করতে চায় তবে বাঁধের রাস্তার ধারে বসবাস করা প্রত্যেকটি পরিবারের জন্য অন্য জায়গায় বাড়ি তৈরি করে দিয়ে আগে স্থানান্তর করে দিতে হবে । ”গ্রামবাসীরা বালি খাদান নিয়ে ক্ষোভে ফুঁষলেও ফোন সুইচ অফ করে দিয়ে বেপাত্তা হয়ে রয়েছেন মুইদিপুরের বালি খাদানের মালিক সজল কোলে ।জামালপুরের দ্বীপেরমানা গ্রামের বাড়িতেও হানা দিয়েও পুলিশ সজল কোলের নাগাল পায়নি । তা নিয়ে পুলিশ মহলও ক্ষুব্ধ । এদিকে এই দুর্ঘটনা নিয়ে শাসক দল ও বিজেপি নেতাদের মধ্যে রাজনৈতিক তর্জা এখন তুঙ্গে উঠেছে । এলাকার বিজেপির মণ্ডল সভাপতি অভিজিৎ ঘোষাল এদিন বলেন ,“পুলিশ ও শাসক দলের মদতে অবৈধ বালি খাদানটি চলছিল । এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে তার প্রতিবাদ জানিয়ে আসলেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি । বালির লরি উল্টে একই পরিবারের তিন জনের মৃত্যুর পর টাকা দিয়ে পুলিশ এখন ঘটনার দায় এড়াতে চাইছে । সবাব মুখ বোজাতে চাইছে । ” যদিও জামালপুরের তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খান বলেন ,“মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করাটাই এখন বিজেপির নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে । শাসক দলের কেউ ওই খাদান চালাতো না । পুলিশ ও প্রশাসন তদন্ত শুরু করেছে । এবার সামনে আসবে মুইদিপুরে
বালিখাদানের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের আসল পরিচয় । ”