ফের বালি খাদান চালু হলে আগুন জ্বলবে - হুঁশিয়ারী গ্ৰামের মহিলাদের

7th November 2020 7:53 pm বর্ধমান
ফের বালি খাদান চালু হলে আগুন জ্বলবে - হুঁশিয়ারী গ্ৰামের মহিলাদের


প্রদীপ চট্টোপাধ‍্যায় ও সিদ্ধার্থ পাকিড়া ( বর্ধমান ) :  মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ টাকা দিয়ে হয়না । টাকা দিয়ে প্রশাসন ও পুলিশ প্রতিবাদকারীদের  মুখ বন্ধ করতে পারবে না ।ফের যদি বালি খাদান চালু করে বাঁধের রাস্তা দিয়ে বালির লরি নিয়ে  যাওয়া হয় তবে আবারও খাদানে আগুন জ্বলবে । রেহাই পাবেন না বালির লরির চালকরাও ।পূ্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ ও প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে শনিবার এই হুঁশিয়ারি  দিলেন জামালপুরের মুইদিপুর গ্রামের মহিলারা ।শুধু হুঁশিয়ারি নয় ,বালি খাদান বন্ধ করতে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন মুইদিপুরের বাসিন্দারা । যা নিয়ে তুঙ্গে উঠেছে শাসক ও বিরোধীদের রাজনৈতিক তর্জা । মাইদিপুর গ্রামে গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৯ টা নাগাদ ঘটেযায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা।ওই সময়ে গ্রামের বাঁধের রাস্তার ধারে থাকা মাটির দু ‘কুটুরি বাড়িতে ছিলেন  প্রশান্ত বাউরি ও তাঁর ভাই সুশান্ত বাউরির পরিবার সদস্যরা  ।  ওভার লোড বালি বোঝাই লরি বাঁধের রাস্তা থেকে প্রশান্তর ঘরের উপরে উল্টো পড়ে । মাটির বাড়ির দেওয়াল ও লরি থেকে পড়ে যাওয়া বালির নিচে চাপা পড়ে মৃত্যু হয় প্রশান্তর স্ত্রী সন্ধ্যা বাউরি ,নবম শ্রেনীতে পড়ুয়া মেয়ে রিঙ্কু বাউরি ও সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলে রাহুল বাউরির ।ঘটনার সময়ে বাড়িতে না থাকায় প্রানে বেচে যান প্রশান্ত । এই ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছালে পুলিশের উপরে জনরোষ আছড়ে পড়ে।রোষের আগুনে পোড়ে এলাকার বালি খাদানের দুটি অফিস ঘর এবং  সেখানে থাকা বালি বোঝাই একটি লরি ও ট্র্যাক্টর । রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ ও জেলা প্রশাসনে কর্তারা শুক্রবার বিকালে ক্ষতিপূরণের সাড়ে ছয় লক্ষ টাকার চেক প্রশান্ত বাউরির হাতে তুলে দেন ।  প্রশান্ত জানিয়েছে ,“জেলা প্রশাসন ছাড়াও জামালপুর থানার পুলিশের কর্তা তাঁর হাতে আট লক্ষ টাকা দিয়েছে । তবে প্রশান্তর সাফ জবাব অর্থ দিয়ে পরিবারের তিন জনের মৃত্যুর ক্ষতি পূরণ হবার  নয় । চোখের জল মুছতে মুছতে প্রশান্ত এদিন  বলেন ,টাকা হয়তো কিছু মিলেছে । কিন্তু স্ত্রী ও সন্তানদের আর তিনি ফিরে পাবেন না । আজীবন স্ত্রী ও সন্তানদের  শোক  নিয়েই তাঁকে দিন কাটাতে হবে  । ”

প্রশাসন ও পুলিশ মৃতর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ অর্থ যাই দিক ,বালি খাদান আর চলতে না দেওয়ার ব্যাপারে এককাট্টা হয়েছেন মুইদিপুরের বাসিন্দারা ।এদিন মুইদিপুর  গ্রামের বধূ সুজাতা বাউরি ,রেখা বাউরি ,যশদা  বাউরি সহ আরো বহু মহিলা দাবি করেন খাদানটি অবৈধ ভাবে চলছিল । পুলিশ ও প্রশাসন সব জানার পরেও এতদিন ব্যবস্থা নেয় নি । এদিন পথে নেমে তারাই  প্রতিবাদে মহিলারা  সরব হন ।মহিলারা বলেন , ক্ষতিপূরণের নামে মৃতর পরিবারকে টাকা দিয়ে সবার মুখ বন্ধ করা যাবেনা। পুলিশ ও প্রশাসনকে মুইদিপুর  গ্রামে চলা বালি খাদান বন্ধ করতেই হবে । পাশাপাশি গ্রামে বাঁধের রাস্তা দিয়ে বালির লরির যাতাযাতও বন্ধ করতে হবে । তা না করে  বালি খাদান যদি ফের চালু হয় ও গ্রামের রাস্তা দিয়ে ফের যদি  বালির লরি যাতায়াত করে তবে আবার খাদানে আগুন জ্বলবে । বালির লরির চালকদেরও রেয়াত করা হবে না বলে মহিলারা এদিন স্বষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছেন । প্রশান্ত বাউরির দিদি প্রতিমা বাউরি ও  গ্রামের মহিলা সুজাতা বাউরি  বলেন , “বালি খাদানের অফিস থেকেই বিক্রি হতো মদ সহ অন্য নেশার দ্রব্য । আর নেশা করেই লরির চালকরা  ওভার লোড বালির লরি নিয়ে বাঁধের রাস্তা দিয়ে বেপরোয়া গতীতে  যাতায়াত করে । বৃহস্পতিবার প্রশান্ত বাউরির বাড়িতে বালির লরি উল্টে পড়েছে । ফের খাদান চালু হলে বাঁধের রাস্তার ধারে বসবাসকারী অন্য কারুর বাড়িতেও বালির লরি উল্টে পড়বে না তার কি গ্যাারান্টি আছে । তাই প্রশাসন যদি বালি খাদিন চালু করতে চায় তবে বাঁধের রাস্তার ধারে বসবাস করা প্রত্যেকটি পরিবারের জন্য অন্য জায়গায় বাড়ি তৈরি করে দিয়ে আগে স্থানান্তর করে দিতে হবে । ”গ্রামবাসীরা বালি খাদান নিয়ে ক্ষোভে ফুঁষলেও ফোন সুইচ অফ করে দিয়ে বেপাত্তা হয়ে রয়েছেন মুইদিপুরের বালি খাদানের মালিক সজল কোলে ।জামালপুরের দ্বীপেরমানা গ্রামের বাড়িতেও হানা দিয়েও পুলিশ সজল কোলের নাগাল পায়নি । তা নিয়ে পুলিশ মহলও ক্ষুব্ধ । এদিকে এই দুর্ঘটনা নিয়ে শাসক দল ও বিজেপি নেতাদের মধ্যে রাজনৈতিক তর্জা এখন তুঙ্গে উঠেছে । এলাকার বিজেপির মণ্ডল সভাপতি অভিজিৎ ঘোষাল এদিন  বলেন ,“পুলিশ ও শাসক দলের মদতে অবৈধ বালি খাদানটি  চলছিল । এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে তার প্রতিবাদ জানিয়ে আসলেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি । বালির লরি উল্টে একই পরিবারের তিন জনের মৃত্যুর পর টাকা দিয়ে পুলিশ এখন ঘটনার দায় এড়াতে চাইছে । সবাব মুখ বোজাতে চাইছে । ” যদিও জামালপুরের তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খান বলেন ,“মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করাটাই এখন বিজেপির নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে । শাসক দলের কেউ ওই খাদান চালাতো না । পুলিশ ও প্রশাসন তদন্ত শুরু করেছে । এবার সামনে আসবে মুইদিপুরে 
বালিখাদানের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের আসল পরিচয় । ”





Others News

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) : প্রায় এক বছর আগে আবেদন করেও মেয়ের জাতিগত শংসাপত্র মেলেনি । আবেদনকারীদের জাতি শংসাপত্র দেওয়ার
ক্ষেত্রে দেরি করা যাবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটে চলেছে।প্রায় এক বছর আগে  চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে  আবেদন করেছিলেন মা।কিন্তু মেয়ে কে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসলেও জাতি  শংসাপত্র আজও না মেলায় কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির রাধাকান্তপুর নিবাসী ঊর্মিলা দাস।ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য ঊর্মিলাদেবী বৃহস্পতি বার মেমারি ১ ব্লক বিডিও অফিসে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন। শংসাপত্র পাবার জন্য বিডিও সাহেব কি ব্যবস্থা করেন সেদিকেই এখন তাকিয়ে ঊর্মিলাদেবী। 

বিডিওকে লিখিত আবেদনে ঊর্মিলাদেবী জানিয়েছেন ,তাঁর স্বামী মানিক দাস দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী ।বছর ১০ বয়সী তাঁদের একমাত্র কন্যা গ্রামের বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত কালে তাঁর ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য তিনি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারী আবেদন করেছিলেন।  উর্মিলাদেবী বলেন ,তার পর থেকে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে  গেলেও তিনি তাঁর মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পান না।মেয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসায় গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তিনি শংসাপত্রের বিষয়ে মেমারি ১ ব্লকের বিডিও অফিসে খোঁজ নিতে যান।জাতি শংসাপত্র বিষয়ের বায়িত্বে থাকা বিডিও অফিসের আধিকারিক তাঁকে অনলাইনে এই সংক্রান্ত একটি নথি বের করে আনতে বলেন । অনলাইনে সেই নথি বের করেনিয়ে তিনি ফের ওই আধিকারিকের কাছে যান । তা দেখার পর ওই আধিকারিক তাঁকে  ২০ দিন বাদে আসতে বলেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন , তিনি ২৫ দিন বাদে যাবার পর ওই আধিকারিক তাঁকে গোপগন্তার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে খোঁজ নেবার কথা বলেন । তিনি এরপর গ্রামপঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যান । নথি ঘেঁটে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে কোন ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি।ঊর্মিলাদেবী দাবী করেন ,এই ভাবে তিনি একবার বিডিও অফিস , আবার পঞ্চায়েত অফিসে দরবার করে চলেন । কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয় না। মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য  গত ১৩ ডিসেম্বর ফের তিনি বিডিও অফিসে যান ।ওই দিনও বিডিও অফিসের জাতি শংসাপত্র বিষয়ক বিভাগের আধিকারিক তাঁকে একই ভাবে পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যেতে বলে দায় সারেন। পরদিন তিনি পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে গেলে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ফের জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে  ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি । কেন মেয়ের জাতি শংসাপত্র পাচ্ছেন না সেই বিষয়ে  না পঞ্চায়েত না ব্লক প্রশাসনের কর্তৃপক্ষ কেউই তাঁকে কিছু জানাতে পারেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন ,পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির আগে তার মেয়ে যাতে ওবিসি শংসাপত্র পেয়ে যায় তার ব্যবস্থা করার জন্য এদিন তিনি বিডিওর কাছে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন । মেমারী ১ ব্লকের বিডিও আলী মহম্মদ ওলি উল্লাহ এদিন বলেন ,“জাতি শংসাপত্র পাবার জন্য হাজার হাজার আবেদন জমা পড়ছে । তবে ঊর্মিলাদেবীর কন্যা দ্রুত যাতে বিবিসি শংসাপত্র দ্রুথ পান সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে “। মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য বলেন,’মেমারি  বিধানসভা এলাকার আবেদনকারীরা দ্রুত যাতে জাতি শংসাপত্র পান সেই বিষয়ে প্রশাসনকে আরও তৎপর হওয়ার কথা বলবো’।